প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ছবি : প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের এই বিরাট অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা একে মুছে দিতে চায়, আড়াল করতে চায়।”
এটিকে নতুনভাবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে। এটি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের বিষয় নয়, বরং জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়।"
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ইঙ্গিত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, "আমাদের নতুন বাংলাদেশের পথচলায় এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিকে যেন আমরা সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ভুল না করি। এজন্য সবার পরামর্শ নিয়ে আমাদের একযোগে কাজ করা উচিত। সবাই মিলে কাজ করলে একটি শক্তিশালী ঐক্য গড়ে উঠবে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম দিন ৫ আগস্ট থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে বলেন, "তবে এখন যে চেষ্টা চলছে, তার একটি বিশেষ রূপ রয়েছে। এজন্য আমি আপনাদের বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছি। এটি হচ্ছে, যে বাংলাদেশ আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটিকে আড়াল করে আরেকটি বাংলাদেশের কাহিনী তারা রচনা করছে। তারা সারাক্ষণ এর বিভিন্ন রূপরেখা দিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।"
বিশেষ কিছু বড় বড় দেশের মধ্যে এ ষড়যন্ত্র জড়িয়ে পড়েছে। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "যারা অপতথ্য ছড়াচ্ছে, তাদের আমরা বারবার বলছি, আসুন, দেখুন। এখানে কোনো বাধা নেই। এখানে কি কিছু বলার বা দেখার কোনো বাধা রয়েছে? কিন্তু তারা কল্প-কাহিনি বানিয়ে যাচ্ছে। এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তা একসাথে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মাধ্যমে নয়, কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে নয়। যারা আমাদের ওপর চেপে ছিল, তাদের আমরা বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেদের মুক্ত করেছি। এই বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "কিভাবে এটি তুলে ধরব, সে ব্যাপারে পরামর্শ চাই। সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।"
সরকারের আহ্বানে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমরা কেন জানি ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারছি না। আমরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জগদ্দল পাথর সরাতে পেরেছি, যা নিয়ে আমাদের আনন্দ করার কথা। কিন্তু আমাদের এই মুক্তি, এই স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না। নানা ভাবে, নানা জায়গা থেকে এটি উল্টে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "৫ আগস্টের পর থেকে নানা রকম ষড়যন্ত্র এসেছে, আপনি বাস্তবতার আলোকে সেগুলো দেখেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমি মনে করেছিলাম দুর্গাপূজা আসছে, হয়তো এতে কিছু হাঙ্গামা শুরু হবে। তাই আমরা ঐক্যের আহ্বান জানাই, এবং সবাই ঐক্যের মধ্যে শরিক হয়েছিলেন। সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হয়েছে, আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম।"
তিনি আরও বলেন, "সারা দেশ পূজার আনন্দে সবাই শামিল হয়েছিল। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা বা কটূক্তি ঘটেনি। কিন্তু সেটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। আবার নতুন নতুন কৌশলে ষড়যন্ত্র চলছেই।"
যড়যন্ত্রকারীদের উদ্ধৃত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "তারা গণ-অভ্যুত্থানকে ভয়ংকর কিছু হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে, এবং সেই ঘটনা থেকে রক্ষা করতে তারা এগিয়ে আসতে চায়। তাদের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণিত করে বাস্তবতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে।"
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "এটি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের বিষয় নয়, এটা জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। আমরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুক্ত, স্বাধীন বাংলাদেশ গড়েছি, কিন্তু তারা সেটি মুছে ফেলতে চায়। তারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। কীভাবে তারা সেটি আনবে? তারা একটি কাল্পনিক বাংলাদেশ তৈরি রাখতে চায়। তাদের শক্তি অনেক বেশি—অর্থশক্তি ও আয়োজনের শক্তি ক্রমে বাড়ছে, তারা নতুন নতুন কল্প-কাহিনি তৈরি করছে, যাতে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।"
No comments