Header Ads

Header ADS

সরকার বেক্সিমকোর লোকসানি কোম্পানি বিক্রি করতে চায়।

 সরকার বেক্সিমকোর লোকসানি কোম্পানি বিক্রি করতে চায়।


                                       বেক্সিমকো

সরকার বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, এই গ্রুপের কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ লাভজনক কোম্পানিগুলোই চলমান থাকবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সরকারি তথ্যমতে, বেক্সিমকো গ্রুপের মোট কোম্পানির সংখ্যা ১৬৯, যার মধ্যে ৩২টি কোম্পানি পোশাক খাতে রয়েছে এবং সবগুলোই উৎপাদনে সক্রিয়। এই ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টির মালিকানা বিক্রি করা হবে। এছাড়া, বেক্সিমকো গ্রুপের যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে, সেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর বন্ধ করে দেওয়া হবে।

গত ২৮ নভেম্বর, ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করা হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। ২৮ নভেম্বর ছিল কমিটির প্রথম বৈঠক, যেখানে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

কমিটির সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ‘এ’ শ্রেণিতে রাখা হবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ‘বি’ শ্রেণিতে থাকবে ৩২টি কোম্পানি, এবং বাকি সব কোম্পানি থাকবে ‘সি’ শ্রেণিতে। এই শ্রেণিবিভাজনের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তাঁর প্রস্তাবনার ভিত্তিতে উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

প্রথম সিদ্ধান্ত হিসেবে, বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শ্রমিকদের আগামী তিন মাসের বেতন-ভাতা জোগান দিতে জনতা ব্যাংক প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করবে। দ্বিতীয়ত, ‘বি’ শ্রেণির কোম্পানিগুলোর মালিকানা বিক্রির জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) চূড়ান্ত করে জনতা ব্যাংক আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানাবে। তৃতীয়ত, হাইকোর্টে চলমান রিটের জবাব তৈরির জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হবে, এবং আইনজীবীর খরচ দেবে অর্থ বিভাগ। চতুর্থত, এক সপ্তাহের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের নিয়ন্ত্রণ নেবে কর্তৃপক্ষ, এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে বিএসইসি ও বেক্সিমকোর প্রশাসকের হাতে।

এই সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক (অর্থ ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) ওসমান কায়সার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, "মন্ত্রণালয় আমাদের ডেকেছিল, তবে বৈঠকে রাখেনি। কোনো চিঠি পাইনি, তাই মন্তব্য করতে পারছি না।" তিনি আরও বলেন, "কীভাবে তালিকা করা হয়েছে, তা জানি না। সরকার কী করতে যাচ্ছে, তাও স্পষ্ট নয়। তবে, ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপের অধীন নেই, এবং বি শ্রেণির কিছু কোম্পানির মালিকানা বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না।" তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের কোম্পানিগুলোর ভালো পরিচালনার জন্য ঋণপত্র খোলার ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো।"

২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বেক্সিমকোর রিসিভার মো. রুহুল আমিন, এবং জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান।

এ সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, "শ্রমিকদের মজুরিসহ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তবে সম্প্রতি শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরি না পেয়ে আন্দোলন করছে, যা পোশাকসহ অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।"

এদিকে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, "বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে ১৮০ কোটি টাকা। আমাদের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে জানানো হবে। বি শ্রেণির কোম্পানিগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যও বিডাকে সরবরাহ করব।"



No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.